১)
মুশল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে । বন্যা নিঃশব্দে অভির পাশে হাটছে । তাদের কারও মুখে কোন কথা নেই। বৃষ্টির টুপটাপ শব্দে যেন চারিদিক মুখর হয়ে রয়েছে । অভির মনটা আজ অনেক বেশি ভাল। অনেক প্রতিক্ষার পর বন্যা অবশেষে তাকে সেই অপ্রতাশিত কথাটি বলেছে। যা শোনার জন্য সে ব্যাকুল হয়ে ছিল । "ভালবাসি তোমায় " এই ছোট্ট কথাটি সে কখনোই বলতে পারেনি । কিন্তু কত সহজে বন্যা তা বলে দিল । খুশিতে অভির নাচতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু রাস্তার মাঝেতো তা সম্ভব না ।তাই ঠিক করল দুজনে এ আনন্দটাকে বৃষ্টিতে ভিজে উপভোগ করবে। বন্যা খুব ছটফটে আর প্রানবন্ত একটা মেয়ে । অনর্গল কথা বলা,কথার মাঝে দু হাত নেরে মাথা নেরে কথা বলা তার চিরাচারিত স্বভাব। আর যা ছাড়া সে অসম্পূর্ন তা হলো বন্যার দু'গালে টোল পরা হাসি । টোল পরা মেয়েদের যেন একটু বেশি সুন্দর লাগে। বন্যাকে দেখবার জন্য অভি কত কি না করেছে । কলেজে সবার
চোখ এড়িয়ে লুকিয়ে বন্যাকে দেখা , কলেজে আসা যাওয়ার পথে চায়ের কানে দাড়িয়ে থেকে ঘন্টার পর ন্টা অপেক্ষা করা । কখন বন্যা আসবে আর কখন সে এক নজর তাকে দেখতে পাবে এই আশায় দাড়িয়ে থাকা । বন্যাকে দূর থেকে দেখেই যেন শান্তি তার । বন্যার ধারে কাছে কখনও সে যেত না । কেন সে বন্যার সামনে যেতে এতো ভয় পায় তা সে নিজেও জানে না। ওর সব বন্ধুরাই বন্যার কথা জানে । এমন কি বন্যাও জানে অভি তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে । ওর বান্ধবিরা তো অভিকে নিয়ে অনেক খেপায় । বন্যা বুঝতে পারে না অভি যদি সত্যি তাকে ভালবাসে তাহলে কেন সাহস করে তাকে ভালবাসার কথা জানাতে পারে না । এদিকে অভি ভয় পায় যদি বন্যা তাকে না করে দেয়।
তাহলে সে কি করবে। এই ভয়ে সে কখনও বন্যার সামনা সামনি হয় না । যাকে এত দিন ভয় পেয়ে এসেছে সেই বন্যাই আজ তাকে ভালবাসি কথাটা বলেছে। ভাবতেই অভি আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছে । এতো আনন্দের মাঝে হঠাৎ অভি লক্ষ্য করে বন্যা কোন কথা বলছে না । যে জিনিসটা তার মাথায় আসছে না তা হলো এত দুরন্ত মেয়েটার হঠাৎ কি হল ? পাশে হাঁটছে কিন্তু তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ।অভি আড় চোখে বারবার বন্যাকে দেখছে । কেমন জানি অচেনা অচেনা লাগছে তাকে ।
২)
এ দিকে বন্যা মনে মনে ভাবে কি হাদা রামরে পাশে হাটছে কিন্তু একটা কথা পর্যন্ত বলছে না । বন্যার অনেক মেজাজ খারাপ হচ্ছে । এই ছেলে নাকি তাকে ভালবাসে? হ্যাঁ বলার পরেও যে ছেলে কথা বলার সাহস পায় না সে নাকি ভালবাসে তাকে ? এই মেন্তাকে ঠিক করতে যে কত বছর লাগবে সেটাই ভাবছে সে । অবশ্য অভির এই লাজুক লাজুক
চেহারাটা তার বেশ ভাললাগে অনেক আগে থেকেই। তবে ভালবাসে কি না ঠিক বুঝে উঠবার আগেই ঘটে এক ভয়ংকর ঘটনা । বন্যার চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই সব
ঘটনা গুলি ।।।।।।।
-জানিস অভি ভাই নাকি কাকে প্রপোজ করেছে ।
-তো আমি কি করব ?
-সত্যি তুই ভাইয়াকে পছন্দ করিস না ?
-না ।
যে ভালবাসে
কিন্তু সামনে এসে
ভালবাসি এটা বলার সাহস রাখে না
এমন হাবলুসকে আমি
ভালবাসব হুহ । বলে বন্যা তিসার কাছ থেকে বিদায় নেয় । তিসা হচ্ছে বন্যার খুব কাছের বন্ধু । বন্যার জন্য সে যে কোন কিছু করতে পারে । তিসার কাছে এসব শুনে বন্যা সোজা বাসায় চলে আসে । বাসায় এসে বন্যা রেগে ব্যাগ ছুড়ে ফেলে দেয় ।অভির উপরের রাগ সব গিয়ে পরে ব্যাচারা ব্যাগের উপর । মনে মনে সে বলতে থাকে, কত্তো বড় সাহস আরেক জনকে প্রপোজ করে । হাবলুসটা আমাকে ভালবাসার কথা বলতে পারেনা । সে কিনা আরেক জনকে ভালবাসে উফফফ ।।।।।।।।।। এতো
দিন অভি তাকে
ভালবাসে এটা শুনলেই বন্যা শুধু
নাক শিটকাতো । এমন মিনমিনে স্বভাবের যে বন্যার ধারনা এমন হাবলুস এ জগতে এক পিছই আছে । আর এই
হাবলুস তাকে ভালবাসে
বলে হেসে উড়িয়ে দিত। অথচ আজ সে অন্য কাউকে ভালবাসে এটা শোনা মাত্র তার এমন রাগ হচ্ছে কেন বুঝতে পারছে না। আর কিছু ভাবতে পারছে না বন্যা। দূর হাদা রাম যা ইচ্ছা তাই করুক । আমার কি
মনে মনে বলে সে নিজের মনকে
সান্তনা দেয় । যতই
এটা বলে নিজেকে সান্তনা দিক না কেন তবুও কেমন জানি এক অস্থিরতায় ভুগতে থাকে সে।
এটা বলে নিজেকে সান্তনা দিক না কেন তবুও কেমন জানি এক অস্থিরতায় ভুগতে থাকে সে।
৩)
বন্যা কলেজে ঢুকতে না ঢুকতেই তিসা এসে বলে,
-বন্যা এই বন্যা শুনেছিস এখন নাকি অভি ভাই ঐ মেয়ের সাথে দেখা করতে যাবে।
- যাক তো আমি কি করবো?
- মেয়েটা নাকি অনেক সুন্দরী । ইসসস অভি ভাইয়া আর লুকিয়ে তোকে দেখবে না তাই না বল?
কথাটা যেন বন্যার কোথাও একটু আঘাত করল। বুকটার ভিতর মনে হয় কেউ
খামচি দিয়ে ধরল তার। তবুও তিসাকে কিছু বুঝতে দিল
না । সে শুধু বলল,
-চলতো দেখে আসি সেই সুন্দরীকে । ওরা কোথায় দেখা করবে জানিস ?
- হু জানি ।আমাদের কলেজের পেছনে যে পুকুরটা আছে ওখানে দেখা করবে।
যে কথা সেই
কাজ ।
মনে মনে যুদ্ধ ঘোষনা করে বন্যা অভিদের হাতে নাতে ধরবে বলে পুকুরের দিকে যেতে শুরু করলো । তিসা বন্যার পিছু পিছু হাঁটছে আর মিটমিট করে হাসছে । আকাশটা
কেমন জানি হঠাৎ
মেঘলা করে আসছে । বন্যার মনও
অভিমানের মেঘে ঢেকে গেল । আকাশের
আগেই সেখানে ঝড় উঠে মনটাকে
উলটপালট করে দিল। যাকে সে কখনো পাত্তা দেয়নি আজ তার জন্য কেন এমন হচ্ছে তা সে জানে না ।
শুধু এখন যে জিনিস
মাথায় আসছে তা হলো এই হাদ
রাম অন্য কাউকে
ভালবাসে তা সে মানতে পারছে না । সে
যেই হোক তার চুল কেটে টাক করে
দিতে ইচ্ছা করছে তার । মনে মনে ঐ মেয়ের ষোল গুষ্টি উদ্ধার করে সে ।
৪)
অভি আনমনে বসে আছে পুকুর পাড়ে । এখানে যখনই আসে তার মনটা কেন জানি ভাল হয়ে যায় । তাই মন খারাপ থাকলে সে এখানে চলে আসে । আজ তার মন একটু বেশি খারাপ । কলেজে আসতেই তাকে একজন ডাক দেয় ।
-অভি ভাইয়া কেমন আছেন ?
-এইতো ভাল, তুমি ?
-জী, ভাল।ভাইয়া একটা কথা বলবো?
-অবশ্যই , বলো।
-না মানে আজ
তো বন্যাকে দেখতে আসছে পাত্র
পক্ষ । সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আজই
বিয়ে হবে।
-কি বলছো তুমি আজই ?
- তাইতো শুনলাম ।
এ কথা শুনে বুকের পাজর গুলো যেন দুমরেমুচরে আসতে লাগলো। মনে হচ্ছে কেউ যেন তার হৃদয়টাকে খামচি মেরে টেনে ছিড়ে আনতে চাইছে। তার মুখ থেকে আর কথা বের হয়না । কোন রকম চোখের পানি লুকিয়ে সে চলে আসে সেখান থেকে ।পুকুরের দিকে অভি হনহন করে হেঁটে যায় । তিসা অভিকে দূর থেকে দেখে মুচকি একটা হাসি দেয় ।
অভি তা দেখতে পায় না। অভির খুব ইচ্ছা ছিল পুকুর পাড়ে বন্যার সাথে বসে গল্প করবে।
অনেক অনেক কথা বলবে । কখনও সুখ দুঃখের কথা, কখনও ভালবাসার কথা , কখনও বা মান অভিমান করবে। কিন্তু না কিছুই করা হল না তার । স্বপ্ন গুলো যেন তার স্বপ্নই রয়ে গেল । ভাবতে ভাবতে চোখ দুটো খুব জ্বালা করে উঠল । যে
ভালবাসা সে এত দিন হৃদয়ে ধারন করে
এসেছে তা অঙ্কুরেই ঝরে গেল । এতো
কিছু ভাবতে ভাবতে যখন
সে দুঃখের অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে ঠিক তখন কান ফাঁটা চিৎকারে ভাবনার জগৎ
থেকে বাস্তবে ফিরে আসে । পিছনে তাকিয়ে দেখে বন্যা অগ্নি মূর্তি ধারন করে আছে ।
সে দুঃখের অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে ঠিক তখন কান ফাঁটা চিৎকারে ভাবনার জগৎ
থেকে বাস্তবে ফিরে আসে । পিছনে তাকিয়ে দেখে বন্যা অগ্নি মূর্তি ধারন করে আছে ।
-এই যে কোথায় সেই রুপসি সুন্দরী কন্যা । যার জন্য এখানে সেজেগুজে তার আগেই এসে বসে আছেন । বন্যার কোন কোথাই যেন তার কানে পৌছাল না ।সে কি বলছে না বলছে তার প্রতি ভ্রুক্ষেপ নেই কার । সে একভাবে বন্যার দিকে তাকিয়ে আছে । সে যেন দেখছে বন্যা বৌ সেজে তার সামনে দাড়িয়ে আছে ।
-তোমাকে বৌ সেজে অনেক সুন্দর লাগছে।
-কি আমি বৌ সেজেছি । চোখের মাথা খেয়েছেন নাকি ?
-কি আমি বৌ সেজেছি । চোখের মাথা খেয়েছেন নাকি ?
বন্যার চিৎকারে সে ভালভাবে তাকিয়ে দেখে লজ্জা পায় । বন্যাতো বৌ সেজে নাই । তাহলে সে কি দেখল ভেবে পায় না। হঠাৎ মনে পরে আজতো ওর বিয়ে কিন্তু ও এখনে কি করছে ।অবাক হয়ে জানতে চায় বন্যার কাছে ।।
- আজ না তোমার বিয়ে ?
-আমার বিয়ে? ইয়ার্কি করছেন আমার সাথে । আমার কথা এড়িয়ে যাওয়ার বুদ্ধি, তাইনা ?
আগে বলুন কাকে প্রপোজ করেছেন ? এখনে আসছেন ডেটিং করতে । আবার বলা হচ্ছে আমার বিয়ে। কত্ত বড় সাহস । বন্যা যেন কথা গুলো এক নিঃশ্বাসে বলে যায় ।
-কি যাতা বলছো? আমি কেন অন্য কাউকে ।।।।। আর করলেও তোমার কি ?
-আমার কি মানে ? আমি তোমাকে ভালবাসি ।।।।।।
রাগের মাথায় বন্যা ভালবাসি কথাটা বলেই চুপ হয়ে যায় । যে কথা সে এতো দিন
নিজের কাছে নিজেই স্বীকার করতো না আজ অন্য কেউ অভির জীবনে আসছে শুনে একমুহুর্তে তা বলে ফেললো । নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না অভি। ভালবাসি কথা শুনে অপলক তাকিয়ে থাকে বন্যার দিকে । যে কথা সে এতো দিন হাজার সাহস সঞ্চয় করেও বলতে পারছিল না সে কথা বন্যা তাকে বলবে সে কল্পনাও করতে পারেনি। অভি বন্যার মুখমুখি এসে দাঁড়ায়।
-কি বললে? আবার বলতো।
বন্যা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে ।
কি বলবে বুঝতে পারছে না ।
-কি চুপ করে থাকবে ?
বলবেনা কি বললে এই মাত্র।
-না বলব না । তার আগে বলো কে সেই মেয়ে ।
যার সাথে এখানে দেখা করতে এসেছো ।
তিসা কিন্তু আমাকে সব বলেছে।
তুমি অন্য কাউকে ভালবাস।
-তিসা বলেছে আমি অন্য
কাউকে ভালবাসি?
অভির যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।
আমিতো কারও
সাথে দেখা করতে এখানে আসিনি।
আমার মন খারাপ
হলে এখানে বসে থাকি । আজ তোমার
বিয়ে একথা শুনে এখানে এসে বসেছি ।
-কি? আমার বিয়ে?
কে বলেছে তোমাকে ?
-এ কথা আমি বলেছি ভাইয়াকে। বন্যা অভি দুজনেই পেছনে তাকায় । দেখে তিসা মিটমিট করে হাঁসছে ।
-তুই এ কথা বলেছিস? কিন্তু কেন? বন্যা অবাক হয়ে
জানতে চায় ।
-বলেছি কারন তুই আর ভাইয়া দুজন দুজনকে অসম্ভব ভালবাসিস। কিন্তু কেউই কাউকে বলতে পারছিলিনা। তাই এটুকু আমাকে করতেই হলো । সরি ভাইয়া সরি দোস্ত ।।।।
বলেই একদৌড়ে সেখান থাকে পালিয়ে আসে বন্যার ভয়ে । কারন বন্যা যে রাগি তাকে সে আস্ত রাখবে না মেরে ।
-বলেছি কারন তুই আর ভাইয়া দুজন দুজনকে অসম্ভব ভালবাসিস। কিন্তু কেউই কাউকে বলতে পারছিলিনা। তাই এটুকু আমাকে করতেই হলো । সরি ভাইয়া সরি দোস্ত ।।।।
বলেই একদৌড়ে সেখান থাকে পালিয়ে আসে বন্যার ভয়ে । কারন বন্যা যে রাগি তাকে সে আস্ত রাখবে না মেরে ।
৫)
আকাশ কি আজ কষ্টে কাঁদছে নাকি খুশিতে বন্যা ভেবে পায় না । তবে তার চোখেও এখন কাঁদছে । তবে তা খুশির । তিসা না থাকলে হয়তো বোঝাই হতো না আনন্দেও চোখ ভিজে ওঠে। বন্যা অভির পাশে হাঁটছে আর ভাবছে এই প্রথম তিসার প্রতি তার রাগ হচ্ছে না । তিসা এমন ভয়ংকর পাগলামীটা না করলে হয়তো সে কখনও বুঝতোই না অভিকে সে কতোটা ভালবাসে। মনে মনে ভাবে বন্ধু তো বন্ধুই। এর ঋণ কখনও শোধ করা যায় না । এমন বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। তিসার কথা মনে হতেই নিজের অজান্তেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে বন্যার। অভি বন্যাকে একা একা হাসতে দেখে অবাক হয় । সে আর চুপ করে থাকতে পারে না ।
-কি শুধু হাঁটবে? কথা বলবে না । এইতো বেশ ঝগড়া করছিলে । তিসা চলে যাবার পর
থেকে মুখে কথা নাই, কেন ?
-কি আমি শুধু ঝগড়া করি ? -আমি কি তাই বলেছি?
-এই মাত্রই বলেছো।
- আচ্ছা আর বলবো না । এই যে কান ধরেছি । এবার ঠিক আছে পাগলী ।
-কি আমি পাগলী ? খবরদ্দার আমার পেছনে হাঁটবে না।
-ঠিক আছে পেছনে না পাশে হাঁটব কেমন । বলে অভি পাশে হাঁটা শুরু করল । অঝোর
ধারায় বৃষ্টি ঝরছে । তার মাঝেই দু'জন পাশাপাশি হাঁটছে । কারো মুখে কোন কথা নাই । হঠাৎ অভি আলতো করে বন্যার একটা আঙ্গুল ধরে । অভি বন্যার দিকে না তাকিয়েও
বুঝতে পারে বন্যার মুখ লাল হয়ে গেছে । বন্যাও কিছু না বলে তার আঙ্গুলটা শক্ত করে ধরে হাঁটতে থাকে ।।।।।।।।।।।।।।।।।।
ফেসবুক লিংক-http://www.facebook.com/kfahima2