ফারহা বৃষ্টি-মীরাবতী


মেয়েটার চোখগুলো কেমন যেন বিষণ্ণ। নাকি আমার মনের ভুল কে জানে। অবশ্য আমি মেয়েদের চোখ বিশেষজ্ঞ না। জীবনে প্রেম করি নি এমন না। কয়েকটাই করেছি। কিছুদিন পরেই মেয়েগুলোর প্রতি একধরনের বিরক্ত এসে যায়। প্রথম প্রথম ভালো লাগে পরে দৌড়ে পলানোর মতো অবস্থা হয়। ছেলে হিসেবে ভার্সিটি তে বেশ পপুলার আমি। গুড লুকিং ফেস সাথে একটু স্টাইলিশ ড্রেস আপ। ব্যাস আর কি চাই???? মেয়েরাও খুশী। তাদের সাথে আমিও। তাছাড়া ছেলে হিসেবে কোন বদনাম নেই আমার। দুষ্টামি পছন্দ করি তবে নোংরামি না। তাই বন্ধু হিসেবে ছেলে মেয়ে দুজনের কাছেই প্রিয় আমি। ওহো নিজের সম্পর্কে এতক্ষন বকবক করেই যাচ্ছি অথচ নিজের নামটাই বলি নি। আমি হচ্ছি সামি। আসল নাম ছিল সামিউল হক। নিজের সাথে মানানর জন্য দাঁড়ি মোছের সাথে নামটাকে কেটে ছোট করে স্টাইলিশ করতে হয়েছে। নিজের সম্পর্কে এত কিছু বলার কারন হচ্ছে ইদানিং আমাদের ভার্সিটি তে পড়তে আসা নতুন এক মেয়ের প্রতি ক্রাশ খেয়েছি আমি। আহামরি সুন্দর যে সেটা না। তবে চেহারাটা মিষ্টি। বেশ মিষ্টি। কাপড় চোপরের ধরন দেখে মনে হয় মিডল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়ে। বিবিএ ফাস্ট সেমিস্টার। মেয়েটাকে দেখলেই মনে হয় বয়সের চেয়েও বেশী ম্যাচিউর। বয়স আর কত হবে একুশ। কিন্তু কথাবার্তা হাবভাব দেখলে মনে হয় ত্রিশ পার হওয়া কোন নারী। যাই হোক অন্য মেয়েদের মতো ন্যাকা না আর অন্যদের চেয়ে আলাদা। এইজন্যই ভালো লেগে গেছে আমার। আপাতত বন্ধুত্ব করতে চাই। কিন্তু কিভাবে????? এই মেয়ে অন্যদের মতো না। খুব বেশী হাসে না, কথাও কম বলে। তাই একটু ভয় হয়, যদি বন্ধুত্তের প্রস্তাবে রাজি না হয়ে অপমান করে??? ভার্সিটি তে ইজ্জতের প্লাস্টিক হয়ে যাবে তবে। তাই সুযোগ খুঁজছি কথা বলার জন্য। একদিন পেয়েও গেলাম ক্যান্টিনে। এক্সকিউজ মি টেবিল টা তে বসা যাবে???? নামহীন মেয়ে একটু হেসে বলল বসুন। তারপর বার্গার কামড় বসাল। আমিও স্যান্ডউয়িচ নিয়ে বসলাম। নামহীন মেয়ে চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে কথা ছাড়া। আমিই শুরু করলাম নতুন ব্যাচ???? আবার মুচকি হেসে বলল হুম। কোন সেমিস্টার??? 1st মনে মনে ভাবছি এই মেয়ে দেখি সব এককথায় প্রকাশ করছে। কথা বাড়ানোর কোন স্কোপ নেই। আমি চুপসে গেলাম। মেয়ে তখন বলে উঠলো আপনি কোন সেমিস্টারে??? আমার মুখ ধ্রুবতারার মত উজ্জ্বল হয়ে উঠল। আমি মাত্র বলতে যাব টেন সেমিস্টার তখন আবিস্কার করলাম চুপসে গিয়ে পুরা স্যান্ডউইচ মুখে পুরে দিয়েছি। মুখদিয়ে কথা বের হচ্ছে না। আমি তাড়াতাড়ি গিলার আপ্রান চেষ্টা করলাম। জিভে কামর লাগলো। কিন্তু নামহীন মেয়ে দাঁড়াল না। আমি মুখ গোমড়া করে ক্যান্টিনে বসে রইলাম।

কিছুদিন পরের কথা ফেবু গুতাচ্ছি এমন সময় নজর পড়ল পিপল ইউ মে নো তে সেই নামহিনা রমণী। ফেবু তে আমার বন্ধু সংখ্যা দুই হাজারের কাছাকাছি। এদের মধ্যে কারো ফ্রেন্ড হবে হয়তো। তাই এসেছে। আমি খুশিতে গদগদ হয়ে গেলাম। আগে রিকু দিলাম। পরে প্রোফাইল ঘুরে আসলাম। মেয়ের নাম সুমি। খুবই সাধারন একটা নাম। সুমি, শান্তা এগুলা সাধারন মেয়েদের নামই হয়। তার প্রোফাইল থেকে খুব বেশী কিছু জানতে পারলাম না, সব কড়া প্রাইভেসি দেয়া। তবে এইটুকু বুঝলাম মেয়ে গল্প লেখে। ফেসবুকের কিছু জনপ্রিয় পেইজ তার গল্প পোস্ট হয়। লেখিকা হিসেবে বেশ পপুলার সে। কিন্তু সেই গল্প পড়ার কোন রকম ইচ্ছা বা আগ্রহ আমার নেই। আমার আগ্রহ লেখিকাতে। সে রিকু গ্রহন করল না। ঝুলিয়ে রাখল। এদিকে তাকে ফলো করার সুবাদে সে তার ওয়াল যা শেয়ার করে আমার হোমে দেখা যায়। একদিন দেখলাম তার প্রকাশ হওয়া আরেকটা গল্প সে তার ওয়াল শেয়ার করেছে। যেহেতু সে রিকু গ্রহন করেনি তাই তার ওয়াল কমেন্ট করতে পারছিলাম না। বাধ্য হয়ে সেই পেইজ গেলাম। অনেক গল্পের মধ্যে তার গল্প খুজলাম এবং পড়লাম। আশ্চর্যজনক ভাবে তার গল্প আমার ভালো লেগে গেল, কমেন্ট করলাম সেখানে। রিপ্লাই এলো। সেই পেইজে তার প্রকাশিত হওয়া সব গল্প পড়লাম। এবং মুগ্ধ হতে বাধ্য হলাম। তার গল্প গুলা ডিফ্রেন্ট হতো। টিপিকাল প্রেম কাহিনী না। তার গল্পে একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম সেটা হোল তার সব গল্পের নায়িকার নাম মীরাবতী। তার সব গল্পে কমেন্ট করলাম এবং তার গল্পের প্রশংসা করে তাকে ইনবক্সে লিখলাম। ভাগ্যিস ইনবক্স খোলা ছিল। দুইদিন পরেই সে আমার রিকু একসেপ্ট করলো। একদিন দুইদিন তিনদিন করে করে বেশ ভালোই চ্যাট হতে লাগলো। অবাক হলেও সত্যি আমি তার লেখা গল্পের অপেক্ষা করতাম। সে কতটুকু ভালো লেখিকা ছিল জনি না তবে আমি তার মনযোগী পাঠকে পরিনত হচ্ছিলাম। এবং সে এটা জানত। ভার্সিটি তে আমাদের দেখা হতো, কথাও হতো তবে সেগুলো খুবই সামান্য এবং প্রাসঙ্গিক। সম্পর্কটা তখনও লেখক পাঠকেই ছিল বন্ধুত্তে আগায় নি। একদিন ক্লাস শেষে ভার্সিটির বাইরে তাকে দেখে লিফট দিতে চাইলাম। সুমি বলল যাবে না। পাঠকের সম্পর্ক ধরেই আমি জোরাজুরি করলাম আমার গাড়িতে উঠতে। অগত্যা আমার কাছে হার মেনে গাড়িতে উঠলো। তারপর আর কি টুকটাক কথা বার্তা এবং শেষে ধন্যবাদ মিশানো একটা হাসি। সেদিন সাহস করে তার ফোন নাম্বার চেয়ে ফেললাম। সে মুচকি হেসে বিদায় জানালো। নাম্বার না দেয়ায় লজ্জা লাগলো ভীষণ।

বিকেলে তাকে চ্যাট পেলাম। নক করা মাত্রই রিপ্লাই আসলো। আমাকে আবার ধন্যবাদ জানালো। কিছু কথা হোল। তার নতুন গল্প সম্পর্কে জানতে চাইলাম। সে অনেক কিছু শেয়ার করলো তার গল্প নিয়ে। জানালো তার ভয় ভয় লাগছে গল্প নিয়ে। আমি বললাম ভয় কিসের???? সুমি জবাব দিল যদি মানুষের পছন্দ না হয়???? এই কথা শুনে আমি কম্পিউটারের এপাশে হেসে উঠলাম। বললাম আরে আজব তো!!!!!!! অপছন্দ হওয়ার তো কোন কারন দেখছি না। যাই হোক শেষ মেষ ভালোবাসার পোস্ট ম্যান নামে এক জনপ্রিয় পেইজে তার গল্প পোস্ট হোল এবং অন্নগুলার মতো এটাও হিট গল্প। লাইক আর কমেন্ট এর বনায় ভেসে যাওয়া আরেকটি গল্প। তাকে ভার্সিটি তে পেয়ে বলে বসলাম কি ব্যাপার??? জনপ্রিয় লেখিকা। কয়েকদিন পরে তো আপনার অটোগ্রাফ নিতে আস্তে হবে। তার আর আমার ক্লাস ছিল না বলে ক্যান্টিনে গিয়ে বসলাম। দুকাপ চা অর্ডার দিয়ে বললাম এইযে দেখেছ বলেছি না এই গল্প হিট হবে, হয়েছে তো??? এবার আমাকে পার্টি দাও। সুমি হেসে বলল বাবাহ গল্প লিখলাম আমি, আর পার্টিও দিব আমি??? পার্টি তো তুমি দিবে। সুযোগ বুঝে বললাম ওকে ডান যাও, আমি পার্টি দিব। কাল তোমাকে কে এফ সি তে খাওয়াব। সুমির মুখের হাসি চলে গেল। গম্ভীর হয়ে বলল দরকার নেই।আমি বললাম কেন না???? প্লিজ চল। অনেক অনুনয় বিনয় করার পরে রাজি হোল। আমি ধন্যবাদ দিব কি তার আগেই ওর ফোন বেজে উঠলো। হ্যাঁ মা বোলো। আনটি ওপাশ থেকে কিছু বলতেই সুমির মুখ অন্ধকার হয়ে গেল। পাগলের মতো ব্যাগ টা নিয়ে দৌড় দিল। যাওয়ার আগে চায়ের কাপ পিরিচ ভেঙ্গে দিয়ে গেল। এবং সেটা খেয়াল করলো না।

নিশ্চয়ই কোন বড় বিপদ নয়তো মেয়েরা এমন করে না। কি হয়েছে জানার জন্য বিকেলে চ্যাট নক দিতেই বলল তেমন কিছুই না। আমিঃ তেমন কিছুই না???? সত্যি???? সুমি বলল হুম চিন্তার কিছুই না, আমি একটু বেশী ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম এই যা। আমার ফ্যামিলি টা একটু অন্যরকম তো তাই। আমি হাঁপ ছেড়ে বাচলাম। চ্যাট থেকে বিদায় নেয়ার পরে অনুভব করলাম আমি ভালো আছি। মানে আমার ভালো লাগছে। তারমানে এতক্ষন আমি খারাপ ছিলাম। মানে সুমির জন্য আমার অস্থির লাগছিল এতক্ষন কিন্তু বুঝতে পারি নি। আশ্চর্যের ব্যাপার অন্য মেয়ে হলে এতদিনে বিরক্তি এসে যেত কিন্তু এই মেয়ের প্রতি আগ্রহ আরও বেড়ে গেল। মেয়েকে আমার ভালোলাগা থেকে শুরু করে বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পর্যন্ত চলে গেল। মানে ভালোবাসা!!!!!!!!!!!!

বহু রিকোয়েস্ট করে তাকে তার গল্পের হিট হওয়ার জন্য থার্টি থ্রি রেস্টুরেন্ট নিয়ে গেলাম। ভেবেছিলাম খাবারের সাথে লাইভ মিউজিক তার ভালো লাগবে। কিন্তু ওখানে গিয়ে দেখলাম আজ তাদের লাইভ শো বন্ধ। কিসের একটা বিজনেস মিটিং নাকি চলছে তাদের রেস্টুরেন্ট গণ্যমান্য বুড়া বুড়া ব্যাক্তি রা এসেছে তাই লাইভ শো বন্ধ। আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। কি আর করা খাবার অর্ডার দিলাম। টুকটাক ভালোই গল্প চলছিল আমাদের মাঝে। জানলাম নাকি আরেকটা চমৎকার প্লট পেয়েছে গল্পের। আপাতত ওইটা নিয়েই বিজি আছে। খুব নাকি ইন্টারেস্টিং প্লট। এমন একটা প্লট নিয়ে তার লেখার ইচ্ছা বহুদিনের হেন তেন। আমি একবার ভাবলাম বলে দেই আমার ভালোবাসার কথা। যেই ভাবা সেই কাজ। বলেই দিব এমন সময় ওর দিকে তাকিয়ে থমকে গেলাম। ভয়ে অথবা আতঙ্কে অথবা ব্যাথায় ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। আমিও ভয় পেয়ে গেলাম। ওর হাত ধরে বললাম এই তুমি ঠিক আছো তো???? পানির গ্লাস এগিয়ে দিলাম। বলল বাসায় যাব। খাবার আসে নি তখনও, তবুও বিল মিটিয়ে চলে এলাম। জোর করে গাড়িতে তুললাম। বললাম তোমার মনে হয় শরীর খারাপ এই অবস্থায় বাসে যাওয়া লাগবে না। আমি পৌঁছে দিচ্ছি। এর পরের দুইদিন আর ওকে পাই নি। না ভার্সিটি তে এসেছে না চ্যাট এ। ওর মোবাইল নাম্বার নিলাম অনেক কষ্টে আরেকজন কে টাকা খাইয়ে কিন্তু কাজ হোল না। ফোন বন্ধ। তিন দিনে বুঝলাম কতটা ভালোবাসি ওকে।

কেমন যেন খালি খালি লাগছিল। চারদিনের দিন ওকে চ্যাট দেখলাম। সাথে সাথেই নক করলাম। বলল অসুস্থ ছিল। আমার মেজাজ খারাপ হয়ে গেল এই কথা শুনে। বললাম সেটা তো একটু ফোন করে জানাতে পারতে। বলল ওর কাছে ফোন নেই। হারিয়ে গেছে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না। সেদিন তো দেখলাম ফোন টা। তাছাড়া এই যুগে ফোন ছাড়া কেউ থাকে???? আমি থাকি। তোমার ফোন ছাড়া থাকার পিছনের কারন টা কি অর্থনৈতিক????? সুমি হাসির ইমো দিয়ে লিখল কাল টায় ক্লাসে আসবো। লিখেই অফলাইন হয়ে গেল। আমি বেকুব হয়ে গেলাম তার এই ব্যাবহারে। সকাল আঁটটা থেকে ক্যাম্পাসের গেট অপেক্ষা করছি ওর জন্য। ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছি। ব্যাগের ভিতরে একটা নকিয়া আশা ফোন। বেশী দামি সেট কিনতে চেয়েছিলাম কিন্তু ব্যাপারটা হয়তো ভালভাবে নিবে না তাই এই সেট কিনলাম। আসলে ওকে দিব। হঠাৎ একটা নীল গাড়ি এসে থামল সেই গাড়ি থেকে বের হোল সুমি। হেসে হাত নেড়ে ড্রাইভার কে কি যেন বলল। আমি সামনে গিয়ে বললাম কি খবর??? কেমন আছ এখন??? সুমি হেসে বলল ভালোই আছি। খেয়াল করে দেখলাম ওকে বেশ সুন্দর লাগছে। অসুস্থ মোটেও লাগছে না। আমি বললাম কার গাড়ি ওটা???? বলল আমার। আমি হা হয়ে গেলাম। যেই মেয়ে মোবাইল চালায় না সেই মেয়ের গাড়ি????? বলল এত অবাক হয়ে তাকাচ্ছ কেন???? আমি ক্লাস করে আসি তারপর ব্রেক এর সময় কথা বলবো। ওকে বায়। আমার কোন ক্লাস ছিল না। ক্লাস করার ইচ্ছেও ছিল না। আমি বাসায় চলে এলাম। আমার ভালো লাগছিল না। কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছিল। আগে কখনো এমন মনে হয় নি। দুইদিন চ্যাট এও গেলাম না। তিনদিনের দিন সেই নক করলো। এই কি খবর তোমার???? সেদিন ওভাবে চলে এলে যে???? শরীর ভালো তোমার???? ঠিক আছো তো??? দুদিন ধরে চ্যাট এও এসো না। কি হয়েছে বলতো। ঠিক আছো তো তুমি???? তার এতো গুলা প্রশ্নে বুঝতে বাকী রইল না যে সে আমাকে নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় ছিল। কেন যেন মনটা খুশিতে ভরে গেল। ভাবলাম তাকে জানিয়ে দেব আমার ভালোবাসার কথা। কিন্তু ওপাশ থেকে লেখা আসলো তার পরীক্ষা। সেটা নিয়ে সে খুব টেনশনে আছে। আমি ভাবলাম থাক এক্সাম শেষ হলে তারপরে জানাব। পরীক্ষার মাঝে টেনশন দিয়ে লাভ নেই। কিছুদিন পড়ে যথারীতি এক্সাম চলে এলো। তাকে এক্সামের আগে উয়িশ করি আমি। আমার কেন যেন ভালো লাগে। সেদিন তার শেষ পরীক্ষা ছিল আর আমার অপেক্ষার শেষদিন। কারন সেদিন পরীক্ষা শেষ হলে আমি জানিয়ে দিব তাকে এই প্ল্যান করেছি।

সেদিন তাকে অল দা বেস্ট বলতে গিয়েছি এমন সময় তার ফোন বেজে উঠলো। ওপাশ থেকে কি বলল বুঝা গেল না, তবে মারাত্মক সিরিয়াস কিছু সেটা ওর মুখ দেখেই বললাম আনটি ঠিক আছে তো???? বিড়বিড় করে কি বলল বুঝতে পারলাম না। দৌড় দিয়ে যেতে চাইল। আমি খপ করে ওর হাত ধরে ফেললাম। বললাম কোথায় যাচ্ছ??? তোমার এক্সাম টা দিয়ে যাও। সুমি পাগলের মতো একা একা কথা বলেই যাচ্ছে, কিছুতেই থামাতে পারছি না তাকে, শেষে জোরে এক ধাক্কা দিলাম বললাম এই মেয়ে!! কি হয়েছে তোমার???? কি সমস্যা??? একটু পড়ে পরীক্ষা তোমার। এমন করছ কেন???? কিছুতেই এখন যেতে দিব না তোমাকে নয়তো একটা বছর লস হবে তোমার। এরপরে যা করলো সেটা আমি কেন আমার আশে পাশের মানুষগুলাও ভাবে নি। সুমি ওর গায়ের জোর খাটিয়ে আমাকে ধাক্কা দিল, আমি সেটার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না, আমি ছিটকে গিয়ে দূরে সরে পড়লাম। সে দৌড়ে পালিয়ে গেল। আমি এতটাই অবাক হলাম যে ঠায় দাড়িয়ে রইলাম। সে চলে গেল।

বাসায় ফিরেই শুনি বড় আপার শ্বশুর স্ট্রোক করেছে তাকে দেখতে যেতে হবে এক্ষুনি। স্কয়ারে আছেন উনি। আমি আর মা তাড়াতাড়ি দৌড়ে গেলাম। গিয়ে শুনি উনার শ্বশুর আই সি ইউ তে আছে। অবস্থা কিছুটা ভালো। সব কিছু শেষে আমি আর মা বাসায় ফিরবো, আসার পথে দেখি লবিতে সুমি দাঁড়ানো। আমি তাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলাম। পাশে মা ছিল সেই খেয়াল না করেই দৌড়ে গেলাম। তুমি এখানে!!!!!!!!!!সুমি কে প্রশ্ন করলাম। তাকিয়ে দেখি বেচারির চোখ ফোলা ফোলা, গালে চোখের পানি শুকিয়ে দাগ হয়ে আছে, চুল এলোমেলো। বিধ্বস্ত লাগছে ওকে। কি এমন হয়েছে ওর???? এই আনটি ঠিক আছে তো???? বলতেই আবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। আমি নিশ্চিত যে আনটির কিছু একটা হয়েছে তখনি ওর মা পাশে এসে বলল ওর জ্ঞ্যান ফিরেছে। ওর মাকে দেখে আমি ধাক্কার মতো খেলাম। ভদ্র মহিলা মারাত্মক রূপবতী এখনি, বয়সকালে না জানি কত সুন্দরি ছিল??? এর পিছনে না জানি কত ছেলে ঘুরেছে আল্লাই জানে। জ্ঞ্যান ফিরার কথা শুনে সুমির মুখ মুহূর্তে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। কোনদিকে না তাকিয়ে রুমে চলে গেল। আমিও পিছু নিলাম ওর। রুমের জানালা দিয়ে দেখলাম এক বুড়ো ভদ্রলোক কে ঘিরে চারপাচজন মানুষের জটলা। সুমি শব্দ করে কেদেই যাচ্ছে। সবাই সুমি কে বুঝাচ্ছে। আমি চিন্তামুক্ত হলাম। যাক অসুস্থ তাহলে ওর বাবা। এইজন্যই সে এভাবে ছুটে পালিয়েছে। স্বাভাবিক। আমার দুশ্চিন্তা কর্পূরের মতো উড়ে গেল। খুশিমন নিয়ে মাকে সহ বাসায় আসলাম। রাস্তায় মা জানতে চাইল মেয়েটা কে। মাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বললাম। এটা সহ যে আমার বউ হলে এই মেয়েই হবে নয়তো কেউ নয়। মা মোটামুটি খুশীই ছিল কারন সুমি দেখতে খুব মিষ্টি আর মায়াবী। আগামী তিন চার দিন তাকে বিরক্ত করলাম না ফেসবুকে। কোনভাবেই না। ক্যাম্পাসেও গেলাম না। তাকে গুছিয়ে নেয়ার সময় দিচ্ছিলাম।

এর মধ্যে একদিন সুমির ফোন। নাম্বার চিনিনা বলে ফোন ধরে দরাজ গলায় বললাম হ্যালো??? ওপাশ থেকে কয়েক সেকেন্ড নীরবতার পড়ে ভেসে এলো তার কণ্ঠস্বর। আমি সোফায় বসে টিভি দেখছিলাম। উঠে দাড়িয়ে গেলাম যেমন স্কুলে টিচার এলে ছাত্র রা দাড়ায় সেভাবে। পরে মনে হোল আরে আমি দাড়িয়ে আছি কেন??? বসে পড়লাম আবার। সুমি জানতে চাইল কি খবর??? কেমন আছি আমি???? কোন খোঁজ নেই কেন আমার???? আমি বললাম তোমাকে সময় দিচ্ছিলাম, তোমার বাবা অসুস্থ এই দিনে তোমাকে বিরক্ত করতে চাই নি আমি। সুমি অবাক হয়ে বলল বাবা অসুস্থ!!!!!!!!!! এই তথ্য তোমাকে কে দিল???? আমি বোকা বনে গেলাম। কে দিল মানে???? নিজের চোখেই তো দেখে এলাম সেদিন। উনি তোমার বাবা না???? সুমি বলল গম্ভীর গলায় বলল না। আমার বাবা মারা গিয়েছে আমার বয়স যখন এগারো তখন। আমার মাথায় ঠাডা পড়ল। তাইলে কে উনি???? যার জন্য তোমার এই অবস্থা???? সুমি বলল উনি আমার সব। কখনো আমার গার্জিয়ান, কখনো মেন্টর, কখনো বন্ধু আর কখনো বা প্রেমিক। আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল দ্বিতীয়বার। বললাম তুমি আমার সাথে দেখা করো সুমি। এক্ষন, এই মুহূর্তে। তোমার সাথে কথা আছে আমার। সুমি বলল আসতে পারবে না। মাথায় রক্ত উঠে গেল। বললাম কই তুমি??? এখনো হসপিটালে। হুম বলা মাত্রই ফোন কেটে দিলাম আমি। অনেক হয়েছে এই মেয়ের হেঁয়ালি। আজ আমি একটা হেস্ত নেস্ত করেই ছাড়ব। ওই বুড়া ব্যাটা ওর বয়ফ্রেন্ড হয় কি করে??? কি আবোলতাবোল বলেছে এই মেয়ে??? সব জানতে হবে। হাসপাতালে গেলাম সেই ওয়ার্ড এই। সোজা রুমে গেলাম। গিয়ে দেখি একজন লোক ওই বুড়া কে সুপ খাওয়াচ্ছে আর সুমি পাশে দাড়িয়ে রয়েছে। আমি কোনভাবে কোনদিকে না তাকিয়ে সুমির হাত ধরে বাইরে টেনে আনলাম। ওই বুড়া ভদ্রলোক দেখেও কিছু বলল না। তবে সুমির মা আগুন গরম চোখ নিয়ে আমাদের দিকে তাকাল। অস্থির হয়ে ছিলাম আমি, কি বলে শুরু করবো ভেবে না পেয়ে বললাম তুমি কি জানো তোমাকে ভালোবাসি আমি????

অনেক বেশী ভালোবাসি। ফটকামি ভালোবাসা না তোমাকে বিয়ে করবো আমি। সত্যি। তুমি যখন চাইবে তখনি। যেদিন চাইবে সেদিনই। আমি জানতে চাই না ওই বুড়া ভদ্রলোক কে। আমি জানতে চাই না তোমার সমস্যা কি???? শুধু তোমাকে চাই সুমি। জাস্ট ইউ। আই লাভ ইয়ু। ওই বুড়া কে নিশ্চয়ই তুমি ভালোবাসো না। তোমাকে ফোর্স করা হচ্ছে নিশ্চয়ই। ডোন্ট অয়ারি।তুমি কিছু করতে বাধ্য না। আই এম উয়িথ ইউ। সুমি চুপচাপ কথা শুনল। তারপরে একটু হেসে বলল আজকে বিকেলে একটা গল্প পোস্ট করবো, ঐযে বলেছিলাম না একটা মনের মতো প্লট পেয়েছি, এমন একটা গল্প লেখার সাধ আমার আজীবনের, সেই গল্পটা লিখব। ওইটা যদি পড় সামি তবে তুমি তোমার সব জবাব পেয়ে যাবে। এখন প্লিজ যাও। বিকেলে গল্পটা দিব তখন ফোন দিও। আমি কি মনে করে ভাবলাম আচ্ছা ঠিক আছে বিকেলেই ফোন দিব, পড়ে ভাবলাম না। পিছনে ফিরলাম এবং তার দিকে তাকিয়ে জোর গলায় বললাম আমার সব জবাব আমি এখনি চাই, এই মুহূর্তে। তুমি যদি আমাকে বন্ধু ভেবে থাকো, ভালোবেসে থাকো তবে এখনি আমাকে গল্প টা বোলো।

আমরা স্কয়ারের ক্যান্টিনে গেলাম। সুমি রাগী রাগী ভাব নিয়ে বলল বসো এখানে। তুমি একটা পাগল সামি। তোমরা ছেলেরা বন্ধুত্ব বুঝো না তাই না??? কোন মেয়ে ভালভাবে কথা না বললে হয় মুডী, অহংকারী। আর ভালভাবে কথা বললেই ভাবো প্রেমে পড়ে গেছে তাই না?? আমি বললাম এটা আমার কথা না। তোমার গল্পটা বোলো যেটাতে আমার জবাব আছে। সুমি থেমে বলল আচ্ছা, শুনো। গল্পের নায়িকা মীরাবতী। মীরার বাবা মায়ের ছিল লাভ ম্যারেজ, তখনকার যুগে এটা একধরনের অপরাধ ছিল। যার কারনে মিরার বাবা মা দুজনেই পরিবার থেকে ত্যাজ্য হয়েছিল। মানে দুই পরিবারের কেউ বিয়েটা মেনে নেয় নি তারা বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার করতে লাগলো। কিন্তু হঠাৎ একদিন একটা দুর্ঘটনাতে মিরার বাবা পুরোপুরি পঙ্গু হয়ে যায়। মিরার বয়স তখন ১০ বছর। মিরা সম্ভবত ক্লাস ফোর পড়ে। অসুস্থ স্বামী, সংসার, বাচ্চার পড়াশুনার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছিল মিরার মা। বেশ সুন্দরি হওয়ার কারনে মানুষ কাজের বদলে অকাজের প্রস্তাব নিয়ে আসতো। প্রথম প্রথম রাজি না হলেও কোন উপায় না দেখে মিরার মা পতিতাবৃত্তির পথ বেছে নিয়েছিল, আসলে তারকাছে অন্য কোন রাস্তা ছিলই না। সে খুব পড়ালেখা জানত না যে চাকরি করবে। মিরার বাবা বিছাতে শুয়ে শুয়ে গোংরাতো। খাবার মুখ দিয়ে ঠেলে ফেলে দিত। তাকে এই কষ্ট বেশী দিন সহ্য করতে হয় নি। ছয় মাসের মাথায় তিনি নিজেই মারা যান। তার মারা যাওয়ার পরে মিরা আর তার মা অথৈ সাগরে পড়ে। পুরুষ মানুষ ছাড়া সুন্দরি এক মেয়ের মা কি যে বিপদে পড়তে পারে সেটা তুমি না দেখলে বুঝবে না সামি। মিরা সেগুলো বুঝার জন্য যথেষ্ট বড় ছিল। অথবা প্রকৃতি তাকে বয়সের আগেই বড় বানিয়ে দিয়েছিল। মিরার মায়ের কাছে প্রস্তাব আসতে লাগলো বিয়ের কিন্তু কেউ মিরা কে গ্রহন করতে রাজি হোল না। মিরার মাও তাই তাদের প্রস্তাবে রাজি হোল না। ফলে তার সামনে দুটি প্রানির জীবন বাঁচাতে আর কোন রাস্তা খোলা রইল না। একদিন পাড়া তে পুলিশি রেট পড়ল, বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ। মিরার মা আর মিরা ভয়ে পলাল। খুব ঝড় হচ্ছিল সেদিন। রাস্তা পার হতে গিয়ে তারা একটা গাড়ির সামনে পড়ল। মিরার মায়ের পা ভাঙল সেই দুর্ঘটনাতে। গারিওয়ালা ভদ্রলোক গাড়ি থেকে নামলেন। খুব বেশী না তখন তার বয়স ২৯/৩০ হবে। মিরার মাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। পায়ে ব্যান্ডেজ করালেন। ওষুধের টাকা দিলেন। সব করলেন। এবং পরের দিন আসবেন বলে জানালেন।

মিরার মা বুঝল লোক ভালো। ভালো লোকদের নাকি চোখে চিনা যায়। এতদিন অনেক লোকের সাথে মিশে তার মা এই বিদ্যা পেয়েছে। মিরার মা মিরাকে শিখিয়ে দিল ভদ্রলোক এলে তার পায়ে জড়িয়ে ধরে বলতে আমাদের একটা কাজ জোগাড় করে দিতে। যেই ভাবা সেই কাজ। পরেরদিন যখন উনি এলেন মিরা তার পা ধরে চ্যাংদোলা হয়ে ঝুলে পড়ল। ছোট্ট মনে কোথা থেকে এতো দুঃখ এলো কে জানে মিরা কান্না জুড়ে দিল। ভদ্রলোক ওর মা আর মিরা কে বাড়িতে নিয়ে এলো। তাদের বাসায় কাজ দিল। সেই ভদ্রলোকের কিছুদিন পরেই বিয়ে, ঘরে অনেক কাজ। মিরার মায়ের দম ফেলার সময় নেই। ভাঙ্গা পা নিয়েও কাজ করে যাচ্ছে খুশী মনে। কারন একটাই ভাবনা এখন থেকে মিরা কে ভালো স্কুলে পড়াতে পারবে, সম্মানজনক একটা জীবন যাপন করতে পারবে। সেই ভদ্রলোকের নাম ছিল মোস্তাফিজুর রহমান। ডাক নাম এজাজ। ঠিক তার বিয়ের দিন মিরা তার ঘরে গিয়ে বলল স্যার আপনি অনেক ভালো, আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি। কেন বলল সেটা মিরাই জানে। ১১ বছরের একটা বালিকার কথা ৩০ বছরের একটা লোকের সিরিয়াসলি নেবার কথা না, উনিও নেয় নি। শুধু কিছুক্ষন তাকিয়ে ছিল। যাইহোক বিয়েটা সেদিন হয় নি। কারন কি ছিল জানো সামি??? কারন ছিল মিরা আর তার মা। সেই ভদ্রলোকের শ্বশুরবাড়ির দিকের কে যেন মিরার মা কে চিনে। তাদের কে বাসায় আনার অপরাধে সেই লোকের বিয়ে ভেঙ্গে যায়। মোস্তাফিজ সাহেবের মা বলল মিরা আর তার মা কে লাথি মেরে রাস্তায় ফেলে আসতে। মিরার মাও ভেবেছিল তাই করবে কারন উনি সত্য লুকিয়েছে। হোলও তাই। মোস্তাফিজ সাহেব তাদের বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। সেদিনও বৃষ্টি হচ্ছিল খুব। বাড়ির বাইরে বের হতেই বাড়ির ম্যানেজার মিরা কে আর তার মা কে তাদের বাসায় নিয়ে গেল। থাকতে দিল। খাবার দিল। বিনা কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই। মিরা ওখানেই বাড়তে লাগলো। নেপথ্যে যে মোস্তাফিজ সাহেব ছিল সেটা বুঝতে মিরা আর তার মায়ের এক বছর লেগে গেল। যখন মোস্তাফিজ সাহেবের মা মারা গেল তখন ম্যানেজার সাহেব তাদের কে একটা একতলা বাড়িতে নিয়ে গেল, আর বলল এখন থেকে এটা তোমাদের বাড়ি। মিরা তার মা সব বুঝলেও কিছু বলার ছিল না। তারা আশ্রিত। সেই বাড়িতে ওরা যখন প্রথম যায় কিছুক্ষন পরেই এজাজ সাহেব আসেন। এবং বলেন এখন থেকে এটা তোমাদের বাড়ি। কাগজপত্র ম্যানেজার এর কাছ থেকে বুঝে নিও আর যা লাগবে উনার কাছে বললেই হবে। ব্যাস আর কোন দেখা নেই মিরার পরিবারের সাথে মোস্তাফিজ সাহেবের। শুধু মাসে মাসে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা পৌঁছে যায় তাদের কাছে। মিরা আর তার মা চোখ মুখ বুজে নিতে থাকে সেই টাকা। সেই টাকাতেই পড়তে থাকে ও। এর মধ্যে এস এস সি পরীক্ষার্থী হয় মিরা, ফরম ফিলাপের টাকা হারিয়ে ফেলে সে, মা কে যে বলবে সেই সাহস নেই তার। মিরাদের পরিস্থিতি কি সেটা ওর চেয়ে ভালো কেউ জানে না। মাকে কিছুই জানানো যাবে না। একে তো রাগারাগি করবে, ২য় তো চিন্তায় অস্থির হয়ে যাবে।সব ভেবে চিনতে মিরা ভাবল নিজেই যাবে মোস্তাফিজ সাহেবের কাছে। বাসা চিনে ও। চলে গেল স্কুল থেকে সোজা ওয়ারীর বাসায়। দারোয়ান ওকে কে দেখে চিনল, ঢুকতে দিল। হয়তোবা দারোয়ান কিছু জানে নিশ্চয়ই। ভর দুপুর বেলা অথচ বাড়ি কেমন অন্ধকার। গা ছমছমে পরিবেশ। উনি নিশ্চয়ই দোতালা তে। তাই সিঁড়ি তে পা বাড়াল মিরা। ভয় বুক ডিব ডিব করছে তার। যদি টাকা না পায়???? যদি কেউ তাকে???? যদি মোস্তাফিজ সাহেবি তাকে???? মানুষের কথা তো আর বলা যায় না???? নিয়ত খারাপ হতে কতক্ষন???? এইটুকু বলেই থামল সুমি।

কেমন লাগছে সামি গল্পটা??? আমি বললাম এটা কি সত্যি ঘটনা???? সুমি বলল আরে নাহ!!!!! গল্প তো গল্পই। আমি বললাম মিরার কি হোল শেষ পর্যন্ত??? সুমি বলল শুনতে চাও আসলে???? আমি বললাম হুম। সুমি বলল মিরা সেদিনই শেষ হয়ে গিয়েছিল পুরাপুরি। সুমির এই কথা শুনে আমি পাংশুবর্ণ হয়ে গেলাম। বললাম মানে কি????? সুমি বলা শুরু করলো দোতালায় যেতেই একটা ঘর। দোতালায় একটা ঘরই মাত্র। দরজা ভীষণ টাইট দরজা। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই দেখল ঘরটা খালি। একটু সামনে এগিয়ে যেতেই দেখল উনি ইজি চেয়ারে বসে আছে ঠিক তখনি দরজা আপনাআপনি লেগে গেল, মিরা ভয় পেয়ে গেল। তার কেন যেন মনে হচ্ছিলো এটা একটা চাল যে ঘরে ঢুকবে আর দরজা লেগে যাবে। এর পরে এজাজ সাহেব মিরার মুখ চেপে ধরবে। দরজা লেগে যাওয়ায় ভয় পেয়ে মিরা বলতে লাগলো জেতেদিন প্লিজ আমাকে যেতে দিন। আমার টাকা লাগবে না আমি ফর্ম ফিলাপ করবো না। এজাজ সাহেব পিছনে ঘুরে দেখেন মিরা ভয় পেয়ে কাঁদছে। উনি কিছুই বুঝল না। শুধু দরজা খুলে দিল। উনাকে দরজা খুলতে দেখে মিরার ভয় কমলো। মিরা চুপচাপ কাঁদছে আর উনি ম্যানেজার কে ফোন দিয়ে টাকা আনিয়ে মিরা কে দিয়েছে। তারপরে ম্যানেজারের সামনে কষে এক ধমক লাগিয়ে বলেছে প্লাস ছাড়া যেন ভবিষ্যতে বাড়িতে পা না রাখা হয়। কিছুর প্রয়োজন হলে ম্যানেজার কাকু কে বলতে। এখন বের হয়ে যাও বলে আরও এক ধমক। মিরা ভয় পেয়ে সেদিন চলে আসে। মা কে জানায় না সেকথা। কিন্তু কিছু একটা পরিবর্তন হয় তার, এই কথা সে চেয়েও ভুলতে পারে না। মাথায় পোকার মতো আটকে রয়েছে। এপ্লাস যেদিন পায় সেদিন মিষ্টি নিয়ে আর ওর মা মোস্তাফিজ সাহেবের বাসায় যায়। উনি ছুয়েও দেখে না মার্কশিট টা কিন্তু গিফট হিসেবে একটা কম্পিউটার ঠিকই চলে আসে মিরার কাছে। এইচ এস সি তেও একি অবস্থা। গিফট হিসেবে মোবাইল ফোন চলে আসে। শুধু তাই নয় নিয়ম মতো টাকাও চলে আসে। মিরা একদিন আবার সাহস করে সেই বাড়িতে যায়, এজাজ সাহেবের রুমে যায়। এবারো দরজা লেগে যায়। কিন্তু মিরার ভয় লাগে না কেন যেন। স্যার????? এজাজ সাহেব চমকে যায় ডাকে। কি লাগবে???? অন্যকোন প্রশ্ন নেই যেন????? মিরা সাহস করে বলে আপনার মোবাইল নাম্বার। এভাবে জবাব দিবে মিরা উনি ভাবে নি। চমকে যায় উনি। বলে বাসায় যাও। মিরা আর কিছু বলে না। ভাবে উনি ফোন দিবে কিন্তু দেয় না। শেষে আবার একদিন যায় তবে এবার শাড়ি পড়ে সেজেগুজে যায়। মায়ের রুপ কিছুটা হলেও সে পেয়েছে, দেখতে মন্দ লাগে না তাকে। সেভাবেই ঢুকে মোস্তাফিজের রুমে। এবার উনি মিরা কে দেখে ভড়কে যায়। পিচ্চি মিরা আর আজকের মিরার তফাৎ দেখে। তবুও নিজেকে সামলে বলে কেন এসেছ???? মিরা বলে মোবাইল ফেরত দিতে এসেছি। মোবাইল ফেরত দিতে চাও????? হুম। জানতে পারি কেন?????? আমার দরকার লাগে না ফোনের। তাই। সারাদিন নিয়ে নিয়ে ঘুরি কেউ ফোন দেয় না তাই। আচ্ছা রেখে যাও। মিরার আশা ছিল উনি এবার উনার নাম্বার টা দিবেন কিন্তু না এবারো হতাশ। উনি আগের মতই বললেন বাসায় যাও। মিরা বলল একটা শেষ প্রশ্ন করি???? তারপরেই বাসায় চলে যাব। আপনি বিয়ে করলেন না কেন????? প্রসঙ্গ পাল্টে উনি বললেন ডি ইউ তে চান্স হবে তো??????? বললাম না। চান্স হবে না। উনি চমকে উঠলেন। মিরা বলল অনেক তো করেছেন এবার না হয় থামুন। কোন ছোটখাট চাকরি দিয়ে দিন। চাকরি করি। পরের ঘাড়ে খেতে খেতে এতদিন পড়ে আত্মসম্মানবোধ জেগে উঠেছে। আপনার তো ফার্ম এর অভাব নেই। যেকোনো একটা ফার্মে লাগিয়ে দিন। আমাকে দিয়ে আর পড়াশুনা হবে না। বলেই চলে এলো। নিশ্চিত উনি বেশ বড়সড় একটা ধাক্কা খেয়েছেন। এটা ছিল এস এস সি এর প্রতিশোধ। তখন ছোট ছিল কিন্তু এখন তো আর ছোট নেই। উনাকে আরও বেশী ভড়কে দেয়ার জন্য ডি ইউ তে পরীক্ষা দিল না। জানত উনার কানে খবর যাবে। হোলও তাই। মিরাকে ডেকে নিল উনি। আবার সেই কামরা। উনি সব সময়ের মতো পিছন দিকে ফেরা। বলল কি সমস্যা তোমার???? কোন সমস্যা নেই তো। পরীক্ষা দাও নি কেন????ফেল মারব এই জন্য। ফেল মারবে!!!!!!!!!! হুম ফেল মারব। আমি ফেল্টুস ছাত্রী। যে দুটো পরীক্ষা তে গোল্ডেন পেয়েছে ফেল্টূস ছাত্রী!!!!!!!!! মিরা বলল গোল্ডেন পাওয়া কিছুই না। মোস্তাফিজ সাহেব বলল তুমি দিন কে দিন গোয়াড় হয়ে যাচ্ছ। ইউ হ্যাভ টু স্টপ অল দ্যাট। আমি আমার বন্ধুর সাথে কথা বলেছি তুমি ওর ভার্সিটি তে বি বি করার জন্য যাবে। এবং এটা আমার শেষ কথা যা তুমি মানবে। শেষ কথা?????? এজাজ ঠাণ্ডা মাথায় বলল হুম শেষ কথা। মিরা বলল ওকে। আমারও একটা শেষ কথা আছে বলি??? এজাজ সাহেব বললেন না। মিরা বলল ওকে বললাম না, কিন্তু কথাটা আমি অনেক অনেক আগেই বলে দিয়েছি। এবার এজাজ সাহেব মুখ ঘুরিয়ে তাকালেন। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললেন বাসায় যাও। মিরা বলল সেদিনও আপনি ঠিক এভাবেই তাকিয়ে ছিলেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে। বাসায় যাচ্ছি। ভালো থাকবেন। এই হচ্ছে আমার গল্প। শেষ করলো সুমি। বলতো কেমন লাগলো????? হুম ভালো লাগলো বাট এজাজ সাহেব মানে মস্তাফিজ সাহেব তো মনে হয় মিরা কে ভালবাসে না। সুমি হেসে বলল বাসে বাসে অনেক ভালবাসে। একবার উনি অসুস্থ হয়েছে তাতে করেই উনি সব স্থাবর অস্থাবর সব কিছু মিরার নামে লিখে দিয়েছে। সেটা শুনে মিরা চা কফির মগ ভেঙ্গে চুরে দৌড় দিয়েছিল। আরেকবার মিরাকে অন্য একছেলের গাড়িতে উঠতে দেখে উনি নিজের গাড়ি ড্রাইভার সহ মিরাকে দিয়েছে যেন অন্য কোন ছেলের সাথে যেতে না হয়। এসব ভালোবাসা না তো কি বোলো সামি???? হুম বুঝলাম কিন্তু এই গল্পের সাথে তোমার মিল কই সুমি??????? সুমি বলল মিল পাবে বিকেল বেলাতে পাবে। এখন প্লিজ বাসায় যাও। তবে এটা জেনে রাখো মীরাবতী শুধু একজন কেই ভালবাসে। সেটা হোল মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে এজাজ সাহেব কে। কারন এটা না যে উনি মিরার জন্য সব করেছে। কারন এটা যে উনি ছাড়া মিরার লাইফে কেউ আসেই নি। সেই জায়গাই ছিল না কারো জন্য। সেখানে তো শুরু থেকেই এজাজ সাহেব ছিল। একেবারে শুরুর শুরু থেকে।

আমি কিছু না বুঝে মাথায় জট নিয়ে বাসায় আসলাম, বসে বসে মিরাবতি আর সুমির মধ্যে মিল খোজার চেষ্টা করলাম। আমার প্রশ্নের জবাব পাওয়ার চেষ্টা করলাম। হঠাৎ মনে পড়ল সুমির ক্যান্টিন থেকে চায়ের কাপ ফেলে যাওয়া। নিল গাড়ি। মাই গড!!!!!!!!! ওইদিন ক্যাফে থার্টি থ্রি তেও উনিই ছিল তবে!!!!!!!!!! তারমানে????? ঘড়িতে সময় দেখলাম চারটা বাজে। ফেসবুকে গিয়েই দেখি ইনবক্স মেসেজ। ওপেন করেই দেখলাম সেখানে নিল হয়ে থাকা নাম কালো হয়ে গিয়েছে।


আর মেসেজে লেখা,

আমিই মীরাবতী!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

 ফেসবুক লিংক-https://www.facebook.com/farhanayesmin.bristy