আরিফ হোসেন জিম-মৃত্যুদন্ড

নদী মারা গেছে অনেক দিন হলকিন্তু এখন ও রাফিন নদীর কথা ভুলতে পারেনিনদী এখন ও তার স্বপ্ণে এসে ডাকে কিন্তু রাফিন সেই ডাকে সাড়া দেয় না


রাফিন মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্য ছেলেঅর্থাত্‍ মেজো ছেলে তারা তিন ভাই রাফিনের পরিবারের সবাই জানত নদীর কথা রাফিনের পরিবার নদীকে পছন্দ ও করত রাফিনের বাবা-মা কখনো রাফিনের কোন ইচ্ছা অপূর্ণ রাখে নিতেমনি এই ইচ্ছাটা ও পূরণ করার কথা ছিল ........................


নদী নামটাই মেয়েটির চরিত্র বলে দেয়নদী ছিল খুবই চঞ্চল প্রকৃতির স্রোত যেমন সকল বাধাকে অতিক্রম করে বয়ে চলে নদী ও ঠিক তেমনই ছিলোতার পরিবারে বাবা,মা ও ছোট ভাই ছাড়া কেউই নেইতারা ও ছিলো মধ্যবিত্ত পরিবার


রাফিন ও নদীর পরিচয় হয় ফেসবুকে তারা কেউ কাউকে দেখে নিকিন্তু দুই জনই দুইজনার জন্য পাগল প্রায় রাফিন সারাদিন মোবাইলটা নিয়ে বসে থাকে আর তার মায়ের বকা খায় মোবাইলের চার্জ শেষ হলে যায় কম্পিউটারে সারাদিনই নদীর সাথে চ্যাট করে রাফিন নদীকে অনেক বলত তার ছবি পাঠাতে কিন্তু নদী পাঠাতো না


রাফিনের সম্পূর্ণ নাম মোঃ আদনান ইসলামরাফিন বলে তাকে কেউই ডাকত নাশুধুমাত্র তার দাদা ছাড়াতাই এই নামে রাফিন সকলের কাছেই অপরিচিতরাফিনের দাদা রাফিনদের সাথেই থাকতওনার বয়স ৮০ এর কাছাকাছি তেমন বেশি কথা ও বলত নাসারাদিন শুয়ে থাকততার পরিবার এবং এলাকার সবাই তাকে আদনান বলেই ডাকতকিন্তু তার দাদার খুশির জন্য তার কাছে রাফিন নামটাই ভালো লাগত


ফেসবুকে রাফিনের ইউজার নেম দুরন্ত রাফিনকিন্তু রাফিনের কিছু প্রশ্নের উত্তর নদী কখনো দিতো না যেমনঃনদী তার আসল নাম নাকি নকল? তারা কোথায় থাকে? ইত্যাদিরাফিন শুধু জানত নদী রসায়নের উপর অনার্স করছে এবং দ্বিতীয় বর্ষে আর রাফিন গণিত নিয়ে শেষ বর্ষেনদী সবসময়ই রাফিনকে কনফিউশনের ভিতর রাখত তাই রাফিন নদীর পড়া লেখার বিষয়টা ও তেমন বিশ্বাস করতো না


রাফিন ছিলো খুবই সহজ,সরল নম্র প্রকৃতির তাই সে মনে করতো নদী যেমনই হোক যেইরকমই হোক সে শুধু নদীকেই ভালোবাসে এবং নদীকেই বিয়ে করবে


আদনান অর্থাত্‍ রাফিনের বড় ভাই ইমদাদ, রাফিনকে অনেক বলতো এইসব ছেড়ে দিতে কিন্তু রাফিন মানতো না রাফিন মনে করতো তার বড় ভাই তার সাথে হিংসা করেকারণ রাফিন সব সময় বলতো যে নদী, প্রথা থেকে ও সুন্দর সে এইটাও বলতো যে নদী সাথে প্রথার তুলনাই হয় না কিন্তু যখন তার পরিবার বলতো নদীর ছবি দেখাতে তখন সে বলতো যখন বাস্তবে দেখাবে তখনই দেখতে অন্যথায় নদীর প্রতি নাকি তার পরিবারের কৌতুহল কমে যাবেকিন্তু সত্য কথা তো রাফিন ও নদীকে কখনি দেখেনি


প্রথা রাফিনের বড় ভাইয়ের হবু স্ত্রী খুব শীঘ্রই তাদের বিয়ে হবে প্রথা দেখতে অনেক সুন্দর প্রথার চুল যেমন বড়,চোখ গুলো ও টানাটানা তাই রাফিন চায় নদী যেন প্রথা অর্থাত্‍ তার হবু ভাবী থেকে ও সুন্দর হয়


নদী,রাফিনকে একটা কথা বলেছে সেটা হল নদী ও রাফিনের মতো ঢাকায় থাকে তাই রাফিন,নদীর সাথে দেখা করার জন উন্মাদ কিন্তু তারা দুজন সময় মিলাতে পারে না আর নদী ও কেমন জানি সব সময় আড়ালে থাকতে চায়রা ফিন মাঝে মাঝে মনে করে নদীর কাছে মনে হয় তাদের এই রিলেশনশিপটা রাফিনের মতো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়কিন্তু পরে আবার রাফিন মনে মনে নিজেকেই বকে এমন উল্টা-পাল্টা চিন্তার জন্য সে নিজেক বোঝায় যে,তার মতো নদী ও তাকে অন্ধের মতো ভালোবাসে


অনেক বলার পর ঠিক ফার্মগেটে নদী,রাফিনের সাথে দেখা করবে  নদী নাকি সম্পূর্ণ লাল রঙে সেজে আসবেঅর্থাত্‍ তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত সবই থাকবে লাল,যেন রাফিনের চিনতে সহজ হয়


রাফিন সেদিন ফার্মগেটে নামল কিন্তু অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ও সে লাল রঙের কাউকে পেল না হঠাত্‍ সে দেখল যে একটা সিএনজি থেকে লাল শাড়ি পড়া একজন নামল কিন্তু রাফিন শুধু তার পিছনের পাশটাই দেখতে পেল এখনই মুখটা দেখবে......................... 

হঠাত্‍ করে একটা হাবিলদার আমাকে খাবার দিয়ে গেলআমিই রাফিন আর লিখতে ভালো লাগছে না অনেক ক্ষিধে পেয়েছে আগে খেয়ে নেই


রাত দুইটা অথবা তিনটা বাজে রাফিনের হাতে একটা ছুঁড়ি সে তার হবু ভাবীর বাসায় সে প্রথার বেডরুমে ঢুকে প্রথার বুকে ও পেটে অনেকবার ছুঁড়ি মারলো প্রথা মারা গেছে রাফিন অনেকক্ষণ কান্না করলো নদী ও ছিলো অনেক সুন্দর.........................


হ্যাঁ এটাই বাস্তব লাল শাড়ি পরা মেয়েটি ছিল প্রথা আমার হবু ভাবী এতদিন তাকেই নদী ভেবে ভালোবেসেছি সেইদিন আমি ফার্মগেট ভাবীকে দেখে হতবাক কিন্তু কখনই ভাবিনী যে ভাবীই নদী হতে পারে ভাবীর কাছে গিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম "ভাবী এই জায়গায়?" ভাবী বলল তিনি নাকি তার এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে এসেছেন আমি বললাম "আমি ও তো" এই কথাটা বলে আমি হতবিম্ব হয়ে
গিয়েছিলাম কারণ ভাবী ও যে সম্পূর্ণ লাল রঙে সেজে এসেছিল


কালই আমি চলে যাবো ওপারে জীবন ও বাস্তবাকে বিদায় দিয়েকাল যে আমার  "মৃত্যুদন্ড"